কুম্ভদর্শন একদিকে যেমন ভারতদর্শন অন্যদিকে তেমনই আত্মদর্শনও বটে। দিনে দিনে কুম্ভের পরিসর বাড়ছে। কুম্ভদর্শন যেন এখন বিশ্বদর্শনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সারা দুনিয়ার মানুষ মাথা ডোবাবার জন্যে সঙ্গমে আসেন। কারণ একসঙ্গে এত মানুষ, বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, রঙ্গে রূপে বৈচিত্র-এ, আশা-আকাঙ্খা-কামনা-বাসনায় এত অসংখ্য মানুষ আর কোথায় পাওয়া যায়। কুম্ভ মেলার আকর্ষণ সব জায়গার থেকে আলাদা। কুম্ভমেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ। কুম্ভ থেকে ফেরার পথে ট্রেনে লেখকের ডাক্তার আহমেদর সাথে আলাপ। তিনি বলেন—"আমরা হজে যাই। তোমরাও কুম্ভে যাও, গঙ্গাসাগরে যাও। আমরা জমজমের পবিত্র জল পান করি, ঘরে আনি। তোমরাও গঙ্গাজ্বলে পূজা কর, পান কর, এমনকি অন্তিমে মুখে দাও। আমরা নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। তোমরাও ব্রহ্মর আকার দিতে পার না। আমরা হজে গিয়ে পবিত্র কালো পাথরের চারপাশে ঘুরি। তোমরাও দশভুজা, চতুর্ভুজা করতে করতে একখন্ড শালগ্রাম শিলায় তদগত হও। এগুলো আসলে আচরণের জিনিস, বাহ্যিক মিল। বিপ্লবীদের যেমন দেশকালের গন্ডি ছড়িয়ে একটা সহমর্মিতা থাকে, একটা গোপন বোঝাপড়া থাকে, ঈশ্বরবিশ্বাসীদেরও তেমনই। হয়তো মতের পার্থক্য থাকে, পথের ভিন্নতাও থাকে, কিন্তু ওসব বাইরের ব্যাপার। ভেতরে একটা মিল থাকেই, সেটা হল বিশ্বাসের মিল। সেই মিলটি অভিন্ন। "
"প্রয়াগকে শাস্ত্রে তীর্থরাজ বলা হয়। উনিশ'শ উননব্বই সালে অনুষ্ঠিত কুম্ভ প্রয়াগক্ষেত্র বিংশ শতাব্দীর শেষ পুন্যকুম্ভ।"
লেখক কুম্ভ থেকে ফেরার পথে নিজ জায়গায় বসে আছেন। রাতের রেলগাড়ি ছুটে চলে। চাকার শব্দ শুনতে শুনতে লেখকের মনে পড়ে যায় এই কদিনের ঘটনা। স্মৃতির ভাড়ারে তো কত লোকই আপনজন হয়ে থেকে যায়। লেখক কুম্ভের সেই অভিজ্ঞতাই এই বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ভ্রমণপিপাসু পাঠকদের কাছে এই বই কুম্ভ থেকে ঘুরে আসারই সামিল।
শতাব্দীর শেষ পূর্ণকুম্ভে
Satabdir Sesh Purnakumva
Satabdir Sesh Purnakumva - Ramkrishna Chattopadhyay
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়