বিদ্যার দেবী সরস্বতী ভারতবর্ষে একটি বিশেষ শ্রদ্ধার স্থান অধিকার করে আছেন। যেমন:- বাগদেবী, বাগীশ্বরী, বাণী, সারদা, ভারতী, বীণাপানি ইত্যাদি। ভারতবর্ষে যেহেতু আদর্শগতভাবে বিদ্যাকে জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য ধরা হয়, তাই বহু প্রাচীনকাল থেকে দেবী সরস্বতীকে মূর্তিমতি জ্ঞানরূপে পূজা করা হয়, ব্রাহ্মন্য পুরানে তাঁকে ত্রিদেব-ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা শিবের স্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সরস্বতীকে বৌদ্ধরা তাঁদের অতিন্দ্রীয় জ্ঞানের দেবতা মঞ্জুশ্রীর স্ত্রী হিসেবে দেখিয়েছেন। জৈন দেববর্গের মধ্যেও তিনি বাণী ও সারদা নামে পরিচিত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সরস্বতী ভারতবর্ষের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। আবার সরস্বতী একটি বৈদিক নদী, "সরস্বতী সভ্যতার "কথাও সেক্ষেত্রে আসে। নদী ও দেবী শুধু এই দুই পরিচয়ে "সরস্বতী" সীমাবদ্ধ নয়। বৈদিক, পৌরাণিক, ধর্মীয় প্রেক্ষিত অতিক্রম করে কখনো নান্দনিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক ক্ষেত্র আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। নদী থেকে দেবীত্বে উত্তরণ হল কিভাবে, কেনই বা "দেবনদী", ঋগবেদে অধিকাংশ জায়গায় "সরস্বতী"শব্দ "সিন্ধুনদ"অর্থে ব্যবহার হওয়ার কারণ, মাতৃগনের নদীগনের দেবগনের "শ্রেষ্ঠা"বলে কেন বর্ণিত, জ্ঞান ও সৃজনের বা নাদব্রহ্মর এই প্রতীক খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টাব্দ ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের স্থাপত্য ভাস্কর্যে শিল্পীদের কেন অনুপ্রেরণা, পাশ্চাত্য উত্তর ঔপনিবেসিক ঐতিহাসিকদের কাছে "সরস্বতী সভ্যতা" কেন আকর্ষণীয়,সিন্ধু সরস্বতী সভ্যতা ও আর্য আক্রমণ তত্ত্ব, শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগ সরস্বতী ও তাল সরস্বতী, শিলালিপি ও তাম্রলিপিতে সরস্বতী, সারস্বত মনন, সকল তথ্য এই বইতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যারা ইতিহাস ও রহস্য জানতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এই বই দেবী সরস্বতীর সাথে জ্ঞান আলোচনার সামিল। এই বই সকল পাঠক ও পাঠিকাদের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠুক এই কামনা করি।
সরস্বতী
Saraswati
Saraswati - Avik Gangopadhyay
অভীক গঙ্গোপাধ্যায়