পারিবারিক সূত্রে ব্রাহ্ম, অপৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের মনে পৌরাণিক হিন্দু দেবসংস্কার থাকার কথা ছিল না। অথচ রবীন্দ্র-সাহিত্যের পাতায় পাতায় অগুনতি দেব-দেবীর আসা-যাওয়া! একবার এক সাহিত্যিক আসরে কবি নবীনচন্দ্র সেনকে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় আমিও পৌত্তলিক কীনা।’ বাবা দেবেন্দ্রনাথের তীব্র অপৌত্তলিক সংস্কারের সঙ্গে মা সারদাদেবীর পুতুলপুজোর আকূতি— এই দুটি ধারাই রবীন্দ্রনাথের মগ্নচেতনে বহমান ছিল। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল-বাহিরমহল-ভৃত্যমহলের দেবসংস্কারের ইতিহাস, উনিশ শতকের দেবমনস্তত্ত্ব, রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত দেবভাবনা ও তার সম্ভাব্য মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা এই বইটির উপজীব্য। লেখক রবীন্দ্রসাহিত্যে উনিশটি দেব-দেবীর প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন বিস্তৃত ভাবে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, নাটক, গল্প ও উপন্যাসে বিচিত্র দেব-দেবীর অনুষঙ্গ এক নতুন দেবলোক তৈরি করেছে। সেখানে অনেক দেবতাই রবীন্দ্রনাথের সৃজনী কল্পনায় হয়ে উঠেছেন অভিনব ও অনন্য। কখনও দেশি ও বিদেশি দেবতা মিলে মিশে এক, আবার কখনও শাস্ত্রীয় দেবতার প্রথাগত সিদ্ধরূপ ভেঙে গেছে, আবার কোনো ক্ষেত্রে দেবতার সত্তা বা স্বভাবের বদল হয়েছে। নতুন নাম, নতুন রূপে রবীন্দ্রনাথের এই দেবলোক তুলনাহীন। তার অন্তরালে উনিশ শতক এবং ঠাকুরবাড়ির দেবচর্চার ইতিহাস নিহিত আছে প্রতিমার চালচিত্রের মতো। লেখক এই নির্মাণ ও সৃষ্টির মনস্তত্ত্ব খুঁজতে চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভরা মনটি। মহুয়া দাশগুপ্তের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের দেবলোক’ উন্মোচন করবে রবীন্দ্র-ব্যক্তিত্বের অভিনব এক পরিচয়।
রবীন্দ্রনাথের দেবলোক
Rabindranather Devalok
Rabindranather Devalok - Mahua Dasgupta
মহুয়া দাশগুপ্ত