'বঙ্গাব্দ' বলতে বঙ্গের অব্দ, অর্থাৎ সব তারিখকে বোঝায়। একটি অব্দকে বাঁচিয়ে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে, সেই অব্দকে কত মানুষ মান্যতা দিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। যেমন 'খ্রিস্টাব্দ'-কে আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ মানছে। আবার বুদ্ধাঙ্ক, মহাবীরানন্দ, নানাকাব্দ, চৈতন্যাব্দ, রামকৃষ্ণাব্দ, লোকগথাব্দ, প্রভৃতি অব্দগুলি সার্বজনীন না হলেও তাঁদের ভক্ত-শিষ্যগণ মানেন। এছাড়া রাজাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর রাজত্বের সূচনা নিজের নামে বা রাজ্যের নামে একটি অব্দ প্রচলন করেছেন, যেমন যুধিষ্ঠিরাব্দ, বিক্রমাব্দ বা বিক্রম সংবৎ, হর্ষাব্দ, মল্লাব্দ প্রভৃতি। সম্রাট আকবর বঙ্গাব্দের স্রষ্টা, এই কথাটি এত বেশি প্রচারিত যে অসত্যকে সত্য পরিণত করা হয়েছে। আকবর নিজে কখনো এমন দাবী করেন নি। আকবরের জন্ম ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে, তাঁর জন্মের ১০৬৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি অব্দের প্রতিষ্ঠাতা হলেন!
বঙ্গদেশের অব্দের পরিচয় 'বঙ্গাব্দ' নামে। বঙ্গে অনেকগুলি তারিখ বা তিথিকে নববর্ষের মান্যতা দিয়ে চলে পূজো পার্বন অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে। যেমন ১লা অগ্রহায়ণকে নববর্ষ বলা হয়, এই নববর্ষ পালিত হয় পিঠে-পার্বণের মধ্য দিয়ে। লৌকিক ছড়ায় এর সূচনার কথা রয়েছে এভাবে—
'অঘ্রানেতে বছর শুরু নবান্ন হয় মিঠে।
পৌষেতে আউনি বাউনি ঘরে ঘরে পিঠে।'
একসময় ১লা চৈত্রকে বৈদিক যুগে নববর্ষের দিন হিসেবে পালন করা হতো। এই মাসটিতে সেকারণে ব্রত উপবাসের নিয়ম সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে ঋতু বন্দনা, পয়লা বৈশাখ ও হালখাতা, পয়লা বৈশাখ নববর্ষ নয়, সেকালের হালখাতা, পয়লা বৈশাখের আড্ডাপীঠ, বঙ্গাব্দ আকবরের প্রতিষ্ঠিত নয়, ফিরে দেখা মাস-সপ্তাহ ও বার, পঞ্জিকা সংস্কার, বৈশাখ সাহিত্যের বারমাসী, বৈশাখের ব্রতপার্বণ, কল্যব্দ কলিযুগের শুরু, পয়লা চৈত্র বসন্তের নববর্ষ, চৈত্র মাসের লক্ষ্মীপূজো ও দোল উৎসব, চৈত্র মাসের ব্রতকথা, শরৎ বর্ষ, পঞ্জিকায় পণ্যপ্রচার, কলকাতার পঞ্জিকা, অব্দ গণনা, বঙ্গাব্দ ফিরে দেখা, বৈশাখের কোন তারিখে নববর্ষ, প্রাচীন সাহিত্যে বঙ্গের উল্লেখ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচিত হয়েছে। আশা করা যায় গ্রন্থটি দ্রুত পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।
পয়লা বৈশাখ বাংলার নববর্ষ নয়
Poila Boishak Banglar Nabobarsho Noy
Poila Boishak Banglar Nabobarsho Noy - Haripado Bhowmik
হরিপদ ভৌমিক