স্মৃতিলেখা
বাবা মারা যাওয়ার পর একদম একা হয়ে গেল সুজয়। যদিও মায়ের মৃত্যুর পরবর্তী দশ বছরে বাবার সাথে তার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল শাসন, অভিযোগ আর অভিমানের। মনে হত বাবা তাকে একদম চেনে না। বাবা থাকাকালীন যে একাকীত্ম তার নিজের বাড়িতেই অনুভব করত সুজয় তা এখনকার বাবাবিহীন একাকীত্মের থেকে অনেক বেশি শ্রেয়। বাবার মৃত্যুর চারদিন পরেও যখন তার মোবাইলে একটাও ফোন বা মেসেজ এল না তখন সুজয় অনুভব করল তার বাবার জীবনের একাকীত্ম। বাবার বিষয়ে এত কম জানে সে যে তার মৃত্যুর খবরটা কাকে কাকে দিতে হবে সেটাও বাবার বন্ধুদের কাছ থেকে আবিষ্কার করতে হল সুজয়ের। বাবার মোবাইলের ফোনবুক ঘেটে নামগুলো এক এক করে পড়তে থাকে সুজয়, কেউ বাদ পড়ে গেল কিনা জানাতে। খুঁজতে খুঁজতে একদম শেষ প্রান্তে একটা অচেনা নামের কাছে থামল সে। ‘টুকু’। বাবার ফোনের কল রেকর্ডের ইতিহাস বলছে বছর চারেক আগে একঘন্টার মতো কথা হয়েছিল এই টুকুর সাথে। কিন্তু এই চার বছরে কি এমন হল যে একঘন্টা কথাবার্তার পর কেউ কারোর সাথে যোগাযোগ রাখল না। কে এই টুকু? টুকুর গল্প আবিষ্কার করতে গিয়ে সুজয়ের জীবনের গল্পে এক নতুন মোড় আসে যেখানে সে খুঁজে পায় তার বাবাকে। তবে আগের মতো করে নয়, এক পুরনো কিম্বা নতুনরূপে।
কাফের ও একটি জানলা
নতুন চাকরি। বাড়ি থেকে দূরে পোস্টিং। দাদার বন্ধু তন্ময়দার বাড়িতে পিজি হয়ে এল আরিফ। তার ঘরে একটিমাত্র জানলা, যা না খুললে ঘর গুমোট হয়ে থাকে। তাই আরিফ জানলা খুলেই রাখে। সেই জানলার বাইরে ঠিক বিপরীতে একটা পুরোনো বাড়ি। সেই বাড়ির জানলায় রাতে আলো জ্বললে আরিফের একাকীত্ম বোধ হয় না। তার মনে হয় যেন সে একা নেই। তারপর একদিন সে আবিষ্কার করে সেই জানলার ওপাশে থাকা এক মেয়েকে। অভিলাশা। ক্রমশ অভিলাশার সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে তার। তাকে নিয়ে স্বপ্নের ক্যানভাসে নানা রংছবি আঁকতে থাকে আরিফ। সময়ের সাথে হাওয়ায় ভেসে আসে এক রহস্যের গন্ধ। তন্ময়দার মুখ থেকে শোনা দুটো শব্দ এক মুহূর্তে আরিফের সব ক্যানভাসে আলকাতরা ঢেলে দেয়। ‘মিসেস রায়’। অভিলাশা কি তাহলে বিবাহিতা? রহস্যের রং আঁধার-কালো হতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। আরও একটা নতুন শব্দ ‘খুন’ অমাবস্যার আকাশে মেঘের মতো এসে আরিফের ভালোবাসার নীল আকাশকে আরও ঘন কালো করে দেয়। সেই আঁধারেই আরিফ খুঁজে পায় অভিলাশার আসল পরিচয়।
কাফের ও একটি জানলা
Kafer O Ekti Janla
Kafer O Ekti Janla - Bidisha Ghosh
বিদিশা ঘোষ