রবীন্দ্র-পরবর্তী বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। ট্রাম দুর্ঘটনার ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ট্রামের ধাক্কায় আহত হয়ে মৃত্যু হয়। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর শরীর প্রায় পিষ্ট হয়ে যায়। এর আট দিন পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কলকাতা পুলিশ মৃতদেহ কিছুতেই ছাড়বে না। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যু বলে পোস্টমর্টেম হতেই হবে। জীবনানন্দের চিরকালের শত্রু ও সমালোচক সজনীকান্ত দাশের ভূমিকায় জীবনানন্দের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় ও কলকাতার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের হস্তক্ষেপে কলকাতা পুলিশ পোস্টমর্টেম থেকে নিবৃত্ত হয়। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু আজও রহস্যে ঢাকা, নিছক মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা সে প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে। ট্রামের ধাক্কা জীবনানন্দ দাশের পার্থিব শরীরকে কেড়ে নেয় ঠিকই কিন্তু জীবনানন্দের কবি সত্ত্বাকে আঘাত করে বাংলা বাজারের হিসেবি সম্পাদক ও প্রকাশকরা। একটা সময় তিনি নিজের লেখাগুলো প্রকাশ না করে ট্রাঙ্কে তুলে রেখে হাসিমুখে বলতেন, "ভাল লাগে তাই লিখি"। তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায় মৃত্যু সম্পর্কে তিনি চিন্তিত ছিলেন। মৃত্যুর পরবর্তী জগৎ সম্পর্কে জানতে তিনি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর সহধর্মিনী লাবণ্য দাশের কথায় তাঁর ভাবনা চিন্তার সত্যতা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। শোনা যায় যে ট্রামটিতে তাঁর দুর্ঘটনা হয়েছিল, সেই অভিশপ্ত ট্রামও নাকি আগুনে পুড়ে যায়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন
ও দারিদ্রে জর্জরিত ছিল। এই গ্রন্থটিতে লেখক জীবনানন্দ দাশের জীবনবোধ,তাঁর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য, তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্য-শিল্পকর্ম ও তৎকালীন সময়ে লেখনীর জগতে বাংলা-বাজারের পরিস্থিতি সবটাই পাঠকদের সাথে ভাগ করে নিতে চেয়েছেন। আশা করা যায় বইটি দ্রুত পাঠকমহলে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
জীবনানন্দের মৃত্যু
Jibananander Mrityu
Jibananander Mrityu - Aniruddha Sarkar
অনিরুদ্ধ সরকার