গত শতকের তিরিশ থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত গজলের ক্রমবর্ধমান লোকপ্রিয়তার মূলে কিন্তু ছিল প্লেব্যাক গানে তার অনর্গল ব্যবহার। কয়েকজন শক্তিশালী সঙ্গীত পরিচালক হিন্দি ছায়াছবিতে এই ধারার গান নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে মদনমোহন, নৌশাদ, রোশন, রবি এবং খইয়াম অসংখ্য লোকপ্রিয় গজল সাধারণ শ্রোতাদের উপহার দেন। এঁদের সুরসৃষ্টির আধার ছিলেন মহম্মদ রফি, তালাত মাহমুদ, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলের মতো দিগ্বিজয়ী শিল্পীরা। তাঁদের যুগলবন্দি থেকে ভারতীয় লোকপ্রিয় সঙ্গীতে গজলের যে জঁরটি তৈরি হয়েছিল তার স্বীকৃতি ও প্রাসঙ্গিকতা প্রায় অর্ধ শতক পরেও অম্লান। মূলত এঁদের এবং অন্যান্য সুরস্রষ্টাদের দৌলতে অদীক্ষিত শ্রোতাদেরও গজল সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি হয়। সত্তর দশকের শেষদিকে হিন্দি ছায়াছবির গানের জগতে ভাঁটার পর্ব শুরু হয়। আকাশছোঁয়া নামগুলি ধীরে ধীরে মঞ্চ থেকে সরে যেতে থাকে। মুগ্ধকর গানের যে ঐতিহ্য দীর্ঘ তিন দশক ধরে শ্রোতাদের নিয়মিত অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল, তা স্তিমিত হয়ে আসে। এই সময়ে কয়েকজন উচ্চকোটির শিল্পী শ্রোতার প্রত্যাশা আর গানের যোগানের মধ্যের ব্যবধানটি পূর্ণ করার জন্য আসরে নেমে পড়েন। তাঁদের মধ্যে প্রধান নামগুলি, যেমন মেহদি হাসান, জগজিত সিং, গুলাম আলি প্রমুখ ভারতীয় সঙ্গীত ঐতিহ্যে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী হতে পেরেছেন। এঁরা ছাড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ নৈপুণ্য নিয়ে গজল পরিবেশন করেছেন হরিহরন, ভুপেন্দ্র, চিত্রা সিং, পিনাজ মসানি সহ আরও কিছু শিল্পী, যাঁদের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত, কিন্তু গুণগত সিদ্ধি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। অনুপ জলোটা, চন্দন দাস, পঙ্কজ উদাস, তালাত অজিজ প্রমুখ এঁদের মধ্যে অন্যতম। অবশ্য, চার দশক আগে দেশে যেমন গজল গানের জনপ্রিয়তা ও জোয়ার ছিল, আজ আর তেমন নেই। তবু, ভারতীয় গান মানেই আজও মেলোডি শেষ কথা। আর, মেলোডির পরাকাষ্ঠা হলো গজল। যদিও এই ঐতিহ্যটি প্রায় হাজার বছরের পুরোনো, এবং গোটা নির্মাণটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে নিমীলিত সামন্তগন্ধী সুবাস। সকলেই বুঝছেন এ গন্ধ একদিন উবে যাবে, কিন্তু সুগন্ধীর শিশিটি এখনও গলায় গলায় ঘুরছে।
বিষয় গজল
Bishoy Ghazal
Bishoy Ghazal - Ajit Roy
অজিত রায়