আর্য জাতি তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যখন ভারতে, ভালো করে বললে উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত আছে, বাংলাদেশে তখন আদিতম দ্রাবিড় গোষ্ঠী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিম জনজাতি গোষ্ঠী বা প্রটোঅস্ট্রোলয়েড গোষ্ঠীর লোকেদেরই বসবাস। এরা ছিলেন অতি উন্নত জাতি, অস্ট্রিক ভাষায় কথা বলতেন। পরবর্তী কালে অবৈদিক আর্য যেমন আলপিও, দিনারিও ইত্যাদি জনগোষ্টিও বাংলার মাটিকে বাসভূমি হিসাবে গ্রহণ করে থিতু হয়ে বসে। এই দ্রাবিড় এবং মুখ্যত অবৈদিক আর্য আলপিও, দিনারিও গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে অস্ট্রিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক গোষ্ঠীর মিলনের ফলেই আজকের বাংলাদেশের বাঙালি গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক উৎপত্তি। অর্থাৎ বাঙালি হচ্ছে মিশ্র শংকর জাতি। বৈদিক আর্যদের বঙ্গ বিজয় এবং বৈদিক সংস্কৃতির আবির্ভাব এর অনেক পরের ঘটনা। বঙ্গসংস্কৃতিতে অনার্য প্রভাব নিয়ে বলা যায় যে নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙালি যে উন্নত জাতি তার কারণ তার রক্তে আছে তিনটি সভ্যতা— প্রোটো-অস্ট্রোলয়েড, দ্রাবিড় এবং মিশ্র আর্যভাষী সভ্যতার মিশ্রণ। তাই বঙ্গ সংস্কৃতি বলতে কেবল বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি আদৌ বোঝায় না। এর পরতে পরতে মিশে আছে অবৈদিক সভ্যতার প্রভাব।
হয়ত বৃহৎ বঙ্গদেশ বলে কোন ধারণা তখন গড়ে ওঠেনি কিন্তু গৌড়, বঙ্গ, রাঢ়, দক্ষিণ রাঢ়, বরেন্দ্র, হরিকেল, সমতট সর্বত্র বসবাসকারী মানুষদের বেঁধে রেখেছিল তার বাঙালিয়ানা, বঙ্গ সংস্কৃতি।
বাংলার লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতি
Banglar Luptapray Lokosangskriti
Banglar Luptapray Lokosangskriti - Tilak Purkayastha
তিলক পুরকায়স্থ